ডেঙ্গু এবং অতিরিক্ত ডেঙ্গু

ওভারভিউ

ডেঙ্গু হলো একটি মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ যা প্রধানত বাংলাদেশের মতো উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় বেশি দেখা যায়। যদিও ডেঙ্গুর নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই, তবে কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ প্রাণঘাতীও হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০১৯ সালে ডেঙ্গুকে একটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, এবং সাম্প্রতিক সময়ের প্রাদুর্ভাবগুলো এই রোগের স্থায়ী প্রভাবকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্ষাকাল বা বর্ষার পরপরই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে—যেমন মশার ঘনত্ব, বিভিন্ন প্রজাতির ভাইরাস, এবং পরিবেশগত অবস্থার মধ্যে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য।

লক্ষণসমূহ কী কী?

ডেঙ্গু সাধারণত জ্বরজাতীয় অসুস্থতা হিসেবে শুরু হয় এবং মশার কামড়ের ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিতে পারে। লক্ষণগুলো হালকা থেকে মারাত্মক হতে পারে এবং ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। অনেক সময় এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু)-এর মতো উপসর্গও প্রকাশ করে।

সাধারণ উপসর্গসমূহ:

  • জ্বর
  • মাথাব্যথা
  • চোখের পেছনে ব্যথা
  • মাংসপেশি ও জয়েন্টে ব্যথা
  • বমি বমি ভাব
  • বমি
  • চর্মরোগ বা চুলকানির মতো র‍্যাশ
  • দুর্বলতা ও ক্লান্তি

চিকিৎসা কী?

ডেঙ্গু মারাত্মক হলে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন:

  • শ্বাসকষ্ট
  • মাড়ি ও নাক দিয়ে রক্তপাত
  • রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া (শকে চলে যাওয়া), যা দ্রুত চিকিৎসা না করলে প্রাণঘাতী হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুর সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে—২০০০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে এর হার প্রায় ৪০০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। প্রতি বছর আনুমানিক ১০ কোটির বেশি মানুষ উপসর্গসহ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং ৩০ কোটির বেশি মানুষ উপসর্গহীনভাবে আক্রান্ত হন। এশিয়া সবচেয়ে বেশি (৭৫%) আক্রান্ত অঞ্চল, এরপর লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকা।

বর্তমানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নির্দিষ্ট কোনো ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে অ্যাসপিরিন এবং আইবুপ্রোফেনের মতো নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ (NSAIDs) এড়িয়ে চলা উচিত।

একটি ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে সুস্থ হলে ঐ ভাইরাস প্রজাতির বিরুদ্ধে আজীবন প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠলেও, অন্য প্রজাতির ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা সাময়িক হয়।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:

  • স্প্রে বা মশার প্রতিরোধক ব্যবহার করুন
  • মশারি ব্যবহার করুন
  • ফুল হাতার কাপড় পরুন
  • জমে থাকা পানি ফেলে দিন
  • পানি জমে না এমন ব্যবস্থা নিন

সূত্র:
World Health Organization (WHO): Dengue and Severe Dengue