অস্টিওপোরোসিস: নীরব হাড় ক্ষয়ের রোগ

অস্টিওপোরোসিস, যাকে প্রায়ই “নীরব হাড়ের রোগ” বলা হয়, এটি হাড়কে দুর্বল করে তোলে এবং সামান্য আঘাত বা পড়ে যাওয়ার ফলেও ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ায় এই সমস্যা দেখা দেয়। অস্টিওপোরোসিসের কারণে সাধারণত হিপ, মেরুদণ্ড এবং কবজিতে বেশি ভাঙার ঘটনা ঘটে, তবে শরীরের যেকোনো হাড়ই এতে আক্রান্ত হতে পারে।

এই রোগে নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হন, বিশেষ করে মেনোপজের পর যখন শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমে যায় এবং হাড় ক্ষয়ের গতি বেড়ে যায়। তবে পুরুষরাও ঝুঁকিমুক্ত নন—বিশেষ করে যারা এমন জীবনধারা অনুসরণ করেন যা হাড়ের ক্ষয় ঘটায় বা যাদের নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে।

এই রোগের কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কিছু বিষয়:

  • ধূমপান
  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান
  • অপুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস
  • শারীরিক পরিশ্রমের অভাব
  • পারিবারিক ইতিহাস
  • কম ওজন
  • দীর্ঘমেয়াদি কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহারের ইতিহাস

এই রোগটি সাধারণত নীরবে গড়ে ওঠে, উপসর্গ দেখা যায় না যতক্ষণ না হাড় ভেঙে যায়। তখন হাড় এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে তা ঝুরঝুরে হয়ে যায়। যাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি বা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন, তাদের জন্য হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা (DXA স্ক্যান) করানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আগেভাগে রোগ শনাক্ত হলে তা থেকে হাড় ভাঙার ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা

অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে জীবনভর হাড় মজবুত রাখা। নিয়মিত ওজন সহনশীল ব্যায়াম এই রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:

  • হাঁটা
  • দৌড়ানো
  • স্ট্রেন্থ ট্রেনিং বা শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম
  • ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও প্রোটিনযুক্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ

যাদের ইতোমধ্যে অস্টিওপোরোসিস ধরা পড়েছে, তাদের চিকিৎসার লক্ষ্য হাড়ের ক্ষয় থামানো এবং হাড় পুনর্গঠন করা। ধূমপান বন্ধ করা, অ্যালকোহল গ্রহণ কমানো এবং বাড়িতে পড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করাও এই রোগের ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

অস্টিওপোরোসিস সম্পর্কে সচেতনতা কেন গুরুত্বপূর্ণ

যদিও এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, তবুও অস্টিওপোরোসিস প্রায়শই সঠিকভাবে নির্ণয় হয় না। অনেকেই বুঝতেই পারেন না যে তারা এই রোগে আক্রান্ত, যতক্ষণ না তাদের হাড় ভেঙে যায়—বিশেষ করে প্রবীণদের জন্য এটি ভয়াবহ জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। হাড়ের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা এবং আগেভাগে স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা শুরু করে অস্টিওপোরোসিসের প্রভাব অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে হাড়কে শক্ত ও সুস্থ রাখতে পারে এবং এই নীরব রোগের ভয়াবহ ফলাফল এড়াতে পারে। ভাঙা হাড় থেকে সুরক্ষিত জীবন যাপনের জন্য প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং সক্রিয় ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি।

তথ্যসূত্র:
? https://beta.worldosteoporosisday.org/about-osteoporosis