মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের সামগ্রিক সুস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবুও, বিশ্বব্যাপী প্রায় প্রতি ৮ জনে ১ জন ব্যক্তি কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছেন। মানসিক রোগ বলতে বোঝায় চিন্তা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ বা আচরণে উল্লেখযোগ্য ব্যাঘাত। এগুলোর মধ্যে সাধারণ রোগ যেমন উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা থেকে শুরু করে আরও জটিল রোগ যেমন স্কিজোফ্রেনিয়া এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডার অন্তর্ভুক্ত। ভালো খবর হলো, অনেক ধরনের মানসিক রোগ প্রতিরোধ বা চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে অনেক সময় কলঙ্ক, বৈষম্য এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষ প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করতে পারেন না।
আন্তর্জাতিক রোগ শ্রেণিবিন্যাসের ১১তম সংস্করণ (ICD-11) অনুযায়ী, মানসিক রোগ এমন এক অবস্থা যা কষ্ট, দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধা বা আত্মহানির ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত। এসব রোগ বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনমান ও দৈনন্দিন কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, যা মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে বৈশ্বিক অগ্রাধিকার হিসেবে তুলে ধরে।
বিশ্বব্যাপী মানসিক রোগের বোঝা
মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব বিস্তৃত ও গুরুতর। ২০১৯ সালে প্রায় ৯৭ কোটি মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এর মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা ছিল সবচেয়ে বেশি। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময় এই সংখ্যা আরও বেড়ে যায়—উদ্বেগ রোগ ২৬% এবং বিষণ্ণতা ২৮% হারে বৃদ্ধি পায় মাত্র এক বছরের মধ্যে।
বিশেষ কিছু মানসিক রোগ
মানসিক রোগের পরিসর বিস্তৃত, এবং প্রতিটির উপসর্গ ও চিকিৎসা পদ্ধতি আলাদা। নিচে কিছু সাধারণ রোগের পরিচিতি দেওয়া হলো:
- উদ্বেগজনিত রোগ: ২০১৯ সালে ৩০১ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। অতিরিক্ত ভয় ও দুশ্চিন্তা এর প্রধান লক্ষণ। মানসিক থেরাপির মাধ্যমে এর কার্যকর চিকিৎসা সম্ভব।
- বিষণ্ণতা (ডিপ্রেশন): ২০১৯ সালে ২৮০ মিলিয়ন মানুষ এতে ভুগেছেন। এটি দীর্ঘস্থায়ী দুঃখবোধ ও আগ্রহহীনতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ওষুধ ও মানসিক থেরাপি দ্বারা চিকিৎসাযোগ্য।
- বাইপোলার ডিসঅর্ডার: ৪০ মিলিয়ন মানুষ এতে আক্রান্ত। এতে মানসিক অবস্থার ওঠানামা দেখা যায়—উচ্চ উচ্ছ্বাস ও বিষণ্ণতা পর্যায়। ওষুধ ও মানসিক শিক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব।
- পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD): সাধারণত যুদ্ধ বা সহিংসতার শিকার এলাকায় দেখা যায়। অতীত ট্রমার স্মৃতি পুনরায় অনুভব করা এর লক্ষণ। মানসিক থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা হয়।
- স্কিজোফ্রেনিয়া: ২৪ মিলিয়ন মানুষ এতে আক্রান্ত। এতে ভাবনার বিভ্রান্তি ও আচরণগত সমস্যা দেখা যায়। ওষুধ ও সামাজিক থেরাপির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- ইটিং ডিসঅর্ডার: ১৪ মিলিয়ন মানুষ এতে ভুগছেন। যেমন: অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা, বুলিমিয়া ইত্যাদি। পারিবারিক ও সাইকোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা হয়।
- আচরণগত সমস্যা ও ডিসোসিয়াল ডিসঅর্ডার: ৪০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত। দীর্ঘস্থায়ী আচরণগত সমস্যা দেখা যায়। সাইকোথেরাপির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
- নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার: এর মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধকতা, অটিজম, ADHD ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। ওষুধ ও সামাজিক থেরাপি এর চিকিৎসার অংশ।
ঝুঁকির কারণসমূহ বুঝে নেওয়া
মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক উপাদানের ওপর নির্ভর করে—ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও কাঠামোগত। দারিদ্র্য, সহিংসতা, সামাজিক বৈষম্য ইত্যাদি ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে, আবেগ নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা এবং ইতিবাচক পারিবারিক সহায়তা মানসিক প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) পদক্ষেপ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। WHO-এর Mental Health Action Plan 2013–2030 লক্ষ্য করে:
- মানসিক স্বাস্থ্যের নেতৃত্বকে শক্তিশালী করা,
- মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার বাড়ানো,
- সচেতনতা বাড়ানো, এবং
- গবেষণা ও প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা প্রচার করা।
এছাড়াও, Mental Health Gap Action Programme (mhGAP) নিম্ন-সম্পদপূর্ণ অঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে সহজলভ্য করতে প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা দেয়।
শেষ কথা
বিশ্বব্যাপী মানসিক রোগের প্রভাব উল্লেখযোগ্য হলেও, ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। সচেতনতা বৃদ্ধি, উন্নত সহায়তা ব্যবস্থা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির পক্ষে কাজের মাধ্যমে আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারি। মানসিক স্বাস্থ্য শুধুমাত্র চিকিৎসকদের নয়, সবার দায়িত্ব। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা পরিবর্তন আনতে পারি।
ব্র্যাক হেল্থকেয়ার-এ আপনি অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোলজিস্টদের কাছ থেকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারেন।
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন:
? https://brachealthcare.com/doctors/?keyword=&location=&specialities=psychiatry&days=
? https://brachealthcare.com/doctors/?keyword=&location=uttara&specialities=psychology&days=
সূত্র:
World Health Organization (WHO):
? https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/mental-disorders